Skip to main content

বড় ব্ল্যক মেইলার

রাইটার - Noor Shaqi

একটু করে বলে রাখছি, আমার আম্মা হলেন মিতভাষী আর প্রচন্ড আত্নসম্মানবোধ সম্পন্ন নারী। আমাদের নানা / দাদার খান্দানে আম্মাকে সবাই বিশ্বাস ও ভালোবাসত.. দাদার বাড়ীতে আম্মাকে আমার কাজিনরা চাচী,জেঠি,মামি ডাকতোনা ডাইরেক্ট 'আম্মা ডাকতো'। আমরা এমন মায়ের সন্তান, এনিয়ে আমাদের বেশ গর্ব হতো..আম্মার আরেকটা গুন হলো তিনি যথেষ্ট সত্যবাদী এবং পরহেজগার নারী,আমাদের ফেমিলিতে বাবা, ভাই আর মামারা ছাড়া কেউ উনাকে সামনাসামনি দেখেনি, সবসময় আম্মা একটা পরদার আড়াল থেকে কথা বলতেন। আম্মার মেয়ের জামাইরাও উনার শুধু দুই চোখ ছাড়া কিছুই দেখেন নি!. পরদার ব্যপারে উনি একটু কঠোর......
যেটা বলছিলাম,ওইদিন থেকে আমাদের সাথে আব্বার ও বেশ একটা ডিসটেন্স চলে আসে... আগে আম্মা কথা বলতে চাইতেন্না এরপর আব্বা.. আমাদের ভাই বোনেরা সব কোন ঠাসা হয়ে পড়ছিলাম। যতো দিন যায় আমাদের সাথে আম্মা আব্বার ডিসটেন্স যেনো বাড়তেই থাকে আর আমরা রোবটের মতো খালি চেয়ে আছি আল্লাহ্‌ কবে উদ্ধার করেন? কিন্তু চেস্টা ত মানুষের করতে হবে! এইবার আমরা ভাই বোনেরা একটু নড়ে চড়ে বসলাম..এনাফ ইজ এনাফ... এইভাবে ত চলতে দেয়া যায়না?? ওরা একের পর এক অন্যায় করে যাচ্ছে আর আমরা এতোগুলা মানুশ ভাগ্যের উপর ছেড়ে বসে আছি, এইটা কোন কথা হতে পারেনা.. যা করার আমাদের কেই করতে হবে,কারন পরিবার আমাদের, মা বাবাও আমাদের, যেচে পড়ে কেউ আমাদের হেল্প করবেনা। তাবিজ, কবজ, হুজুর কবিরাজ বহুত হইসে, এইবার ব্যস!!! যা করার এখনিই করতে হবে.......ডু ওর ডাই....
একটু করে বলে রাখি,আমার সে ভাই আমার মাত্র দুই বছরের বড় মানে আমরা পিঠাপিঠি ভাইবোন।বাকি সব ভাই বোন থেকে আমাদের বয়সের ব্যবধান ১০ এর উপরে। যাইহোক,সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা অপেক্ষায় থাকি তার সাথে কথা বলার কারন আম্মার সামনে তাকে চলে যাবার কথা বলাই যাবেনা!.. সন্ধ্যায় আব্বা আম্মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন, এই সুযোগে আমরা বোনেরা তাকে চলে যাবার জন্য প্রেশার দিলাম কিন্তু মহিলা এক্কেবারে অনড়.... তার একটাই কথা যেহেতু সে কোন অন্যায় করেনি কাজেই বাসা ছেড়ে যাবার প্রশ্নই উঠেনা!!.. তাছাড়া আম্মা আব্বা না বলা পর্যন্ত সে বাড়ী ছেড়ে যাবেনা। তার বলা কথা গুলো ভাইয়ার কানে যেতেই উনি রেগে গেলেন , মহিলাকে বললেন, যাদুটোনা তাবিজ কবজ সব ত করলা,আব্বাকে মুখে বিষ দিয়ে দিছো,আম্মারে এবনরমাল করে সিন্দুক খালি করছো এরপরেও বলো কি করছো? মহিলা সাথে সাথে বল্ল 'আপনারা বলছেন অন্যায় করসি। যদি অন্যায় করেই থাকি প্রমান দিন... আসোলেই ত.!. তাদের দুজনের অন্যায়ের কোন প্রমান আমাদের কাছে নেই?? না আব্বাকে খাবারে কেমিক্যল খাওয়ানোর, সিন্দুক এর চাবি ত আম্মা নিজেই মহিলারে দিসেন,তাছাড়া ব্ল্যক মেজিকের ত কোন প্রমান কেউ দিতে পারেনা?? এটা ত সম্পূর্ণ অশরীরী একটা ব্যপার! বড় ভাইয়া তার কথা শুনে আরো রেগে গিয়ে বললেন 'আমি যদি এই বাবা মায়ের সন্তান হই তাহলে ওয়াদা করছি তোমাকে আজ যাইতেই হবে সেটা জীবিত অথবা মৃত... এখন তুমিই ঠিক করো তুমি কি করবা।.....বড় ভাইয়ের রাগ আর ধমকে সে ভয় পায়।আমাকে ডেকে বলে 'আমি চলে যাচ্ছি,এ চাবিটা রাখো আম্মাকে দিবা ' এরপর মহিলাকে আমি আর আমার হাজব্যন্ড গিয়ে দিয়ে আসলাম তার খালার বাসায়। কারন ভয় ছিলো আমাদের উপর প্রতিশোধ নিতে যদি উলটা পালটা কিছু করে বসে!!মহিলাকে বিশ্বাস নেই....
আব্বা আম্মা ডাক্তারের কাছ থেকে আসতে আসতে প্রায় ১১ টা বেজে গেলো। আম্মা বাসায় ডুকেই মহিলাকে ডাকতে লাগলেন, আমি গিয়ে আম্মাকে বলি 'আম্মু সে নাই আত্তিয়ের বাসায় গেছে, যাবার আগে আলমারির চাবি দিয়ে গেছে। ' কথাটা শুনার সাথে সাথে আম্মা বললেন 'আমাকে ফালাই কেমনে গেলো,আমি ত ওরে ছাড়া থাকতে পারবনা, যাই নিয়ে আসি' উনি খালি পায়ে সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে গেলেন।আমরা ভাইবোনেরা সবাই উনাকে ধরে ফেললাম বললাম ঠিক আছে সকালে যান, এতো রাতে কিভাবে যাবেন তাছাড়া তার খালার বাসা আপনি চিনেন ত না..আমরা ভাইবোন সবাই ধরে আম্মাকে উপরে তিনতলায় নিয়ে আসলাম।. সেদিন কিছু ব্যপার খেয়াল করলাম আম্মার গায়ে অসম্ভব শক্তি ছিল কারন জোর করে ঘরে ডুকাতে আমাদের ভাই বোন সবার ঘাম বের হয়ে গেছে যদিও তখন ডিসেম্বর মাস ছিলো..আম্মার চোখ গুলা বড় আর লাল হয়ে গেছে, ঠোট টাও বেশ কালো!! ঘরে ডুকানোর পরেই শুরু হলো অদ্ভুত ব্যপার যা আগে আমরা সন্তানেরা কখনো দেখিনাই! আম্মা ফ্লোরে বসে গেলেন জোরে জোরে বুক থাপড়াচ্ছেন আর চিৎকার করতে লাগলেন 'ওরে আমার বউ রে মারি ফালাইছে রে,আমার বউ কোথায় গেলো,তোরা আমার সন্তান না সব গুলা খুনী, ..... কত বকাবকি, কত অভিশাপ আর গালি ওইদিন আম্মা আমাদের দিসে বলার মতন না! আম্মার এ অবস্থা দেখে আমাদের বোনেদের জামাইরা হতবাক হয়ে যায়!! কারন তারা আম্মাকে এতো বছর কখনো চোখ ছাড়া সরাসরি দেখেননি, আর আম্মা কথা বলতেন খুব আস্তে, উনার গলার আওয়াজ কম মানুষ শুনছে..আম্মার এহেন অবস্থায় আমরা সবাই দিশেহারা ঠিক কিছুক্ষন পরেই সে মহিলা আম্মাকে ফোন দিলো, ফোনে সে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। আম্মাকে বল্ল আমরা তার গায়ে হাত তুলছি,অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিসি, জোর করে চাবি নিয়ে নিসি ইত্যাদি ইত্যাদি। আম্মা ফোন রেখে আমাদের সাথে কোন কথাই বল্লেন না... সোজা ফোন দিলেন আমাদের এক ফেমিলি উকিল কে যিনি আব্বার প্রপাটিগত সমস্যা গুলো দেখাশুনা করেন.। উকিল কে ফোন দিয়ে বললেন 'কাল সকালে আপনি একটু কস্ট করে বাসায় আসবেন,আমার একটা জরুরী কাজ আছে। আম্মার জরুরি কাজ কি তা বুঝতে না পারলেও এতোটুকু বুঝলাম কাল নির্ঘাত খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে আমাদের বাসায়... কোন সন্দেহ নেই....
সকালে সে ফেমিলি উকিল আসলো, আম্মা তাকে একটা নারী নির্যাতন কেস দাখিল করতে বললেন। মামলার আসামি আমরা সমস্ত ভাই বোন,মেয়ে জামাইরা, ছেলে বউরা।উকিল আম্মার কথা শুনেই চোখ বড় বড় করে ফেল্লো, চুপচাপ কোন কথা না বলেই আমাদের সবার বিরুদ্ধে একটা কেসের খসড়া লিখলেন।আম্মার থেকে বিদায় নিয়ে আলাদা ভাবে আমাদের ডেকে উকিলটা বল্লো'দেখুন আপনাদের ফেমিলিকে আমি প্রায় ৭ বছর ধরে চিনি...আপনাদের আম্মু কিন্তু অসুস্থ, উনার অসুস্থতা অন্য রকম।কোন মা তার সন্তানের জন্য কেস ফাইল করেনা সন্তান যত খারাপ হোক,উনি একচেটিয়া সবার বিরুদ্ধে কেস করতে চাইছেন শুধু ছেলের বউএর কথায়!! উনার কবিরাজী চিকিৎসার প্রয়োজন... আমার জানামতে কুমিল্লা একজন বুড্ডিস্ট আছে যাকে সবাই 'ঠাকুর বাবা' বলে জানে, যদি আপনারা রাজী থাকেন তাহলে আমি ওইখান থেকে কিছু তদবির এনে দিব।উকিলের কথায় আমরা সবাই এতোটাই খুশী হইছি মনে হচ্ছিলো আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আল্লাহ্‌ বুঝি মানুষ রুপি কোন ফেরেস্তা পাঠায় দিলেন! কথায় আছে,বিপদে পড়লেই একমাত্র মানুষ চেনা যায়..কে জানতো যাকে আমরা মানুষ রুপী ফেরেস্তা ভেবেছিলাম সে অনেক বড় একটা ইবলিশ শয়তান হবে....শেষ পর্যন্ত সেই উকিল হয়ে যাবে বড় ব্ল্যক মেইলার!!...

Popular Posts

ব্ল্যাক ম্যাজিক/কালা যাদু থেকে বাঁচার উপায়

রাইটার -  মি. জোকার আমার  প্রথম ৩টি পোষ্টের মাধ্যমে আমি কালা যাদু, জ্বিন, কুফুরি/তাবিজ/বান নিয়ে বলেছি । অনেকে হয়ত এই বেপারে অনেক অবগত হয়েছেন । আর অনেকে বেপারগুলা জানেন কিন্তু এ থেকে বাঁচার উপায় জানেন না । আমি  কালা যাদুর থেকে নিজেকে বাচানোর কিছু প্রথমিক বিষয় আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে আর উপকারেও আসবে । তবে  আমি ব্ল্যাক ম্যাজিক নিয়ে আগে কিছু বলতে চাই । এই ব্ল্যাক ম্যাজিকের অনেক গুলা শ্রেণী বিভাগ রয়েছে । এর মধ্যে কুফরি, ডাকিনি বিদ্যা, ট্যারোট কার্ড অন্যতম । এরা সবাই শ য়তানের পূজা করে । তবে সব কুফরিকারী, ডাকিনিবিদ্যাকারী, ট্যারোট কার্ড রিডার কালা যাদুকর হলেও অনেক কালা যাদুকর এগুলা করে না । আবার সব শয়তানের পূজারি আবার কালা যাদু কর না। যেমন লাভেয়ান সাটানিজম এই জনগোষ্ঠীর কথা আলাদা (এরা শয়তানের পূজা করলেই এদের সব আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে ) তাহলে  শুরু করা যাক , প্রথমেই বলে নেই সব ধর্মে বলা আছে যে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, আর সৃষ্টিকর্তার উপরে আর কেউ নেই । তাই সকল পরিবেশে তার উপরে ভরসা রাখুন । আমরা  ইসলাম ধর্মের যারা আছি তারা...

অতৃপ্ত আইডি

রাত তখন প্রায় ২ টা। ফেসবুকিং করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলো। গিয়ে দেখলাম একটা মেয়ের আইডি, আইডির নাম, 'তামান্না আফরিন'।  আমি প্রোফাইল চেক না করেই রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে ফেললাম।  রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার পর আমি মেয়েটির প্রোফাইলে ঢুকলাম, এবং তার ছবিগুলো দেখতে লাগলাম।  মাশাআল্লাহ! এতো সুন্দর মেয়েটা! বলার বাহিরে! তার আইডিতে তার সাথে অনেকেরই ছবি আছে। এরা হয়তো তার ফ্রেন্ডস আর ফেমিলি মেম্বার। এসব দেখে এতটুকু নিশ্চিত হলাম যে এটা ফেইক আইডি না।  আমি তার ছবিগুলো দেখতে লাগলাম। . মিনিট খানিক পর একটা মেসেজ আসলো। ইনবক্সে গিয়ে দেখলাম এই মেয়েটারই মেসেজ। মেয়েটি "হাই" দিলো। আমিও রিপ্লাই দিলাম "হেলো"। মেয়েটি বললো, ~ কেমন আছেন? . -- জি ভালো। আপনি? . ~ হ্যা ভালো। . -- জি, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেয়ার কোনো কারণ? . ~ নাহ, এমনিই দিলাম। . -- ওহ আচ্ছা। . ~ আপনাকে ভালো লেগেছে। . তার এ কথা শুনে কিছুটা অবাক হলাম। আবার একটু ভালোও লাগলো। কারন ওর ছবিগুলো দেখে ও কে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমি জবাব দিলাম, -- ইয়ে..মানে, বুঝতে পারলাম না . ~ বললাম, আপনাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে। . -- ও...

হরর মুভি রিভিউ - “দ্য এক্সরসিসম অফ এমিলি রোজ”

চলে এলাম আজকের মুভি সিনোপসিস নিয়ে।। আজকে আমি যে মুভিটা নিয়ে লিখবো, সেটা হরর মুভি এর জগতে একটি বিশেষ অবস্থান করে রেখেছে। কারণ, মুভিটির মূল চরিত্রের অস্তিত্ব বাস্তব জীবনেও ছিল এবং এটি প্যারানরমাল বিষয়ের হিস্ট্রিতে একটি বহুল আলোচিত ঘটনার উপর চিত্রিত। মুভিটির নাম হলোঃ- “দ্য এক্সরসিসম অফ এমিলি রোজ” ( The Exorcism Of Emily Rose ) The Exorcism Of Emily Rose আমার মনে হয় মুভির সামারি না দিয়ে আপনাদের সত্য ঘটনাটা বললেই আপনারা বেশি উপকৃত হবেন। কারন, মুভি তো আপনারা ডাউনলোড করেই দেখতে পারবেন। কিন্তু মূল ঘটনা ইন্টারনেটেও কোথাও গুছিয়ে লেখা নাই। তাই আজ আমি প্রথমে ঘটনাটা দিয়েই শুরু করি। “এমিলি রোজ” একটি ফিকশনাল নাম। যার ঘটনা নিয়ে এই মুভিটা হয়েছে তার আসল নাম হলো, “ আনেলিসা মিশেল ” । সে ১৯৫২ সালের ২১শে সেপ্টেম্বার, জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করে। বাভেরিয়া শহরের খুবই সাধারণ এবং সুন্দর একটি মেয়ে ছিল সে। সহজ-সরল এবং ধার্মিক স্বভাবের ছিল। ১৬ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৬৮ সালে হঠাৎ একদিন সে দেখল সে তার নিজের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। সাহায্যের জন্য সে তার পিতা-মাতা আর তিন বোনকে ডেকেছিল ঠিকই কিন্তু তা...