চলে এলাম আজকের মুভি সিনোপসিস নিয়ে।।
হসপিটালে এডমিট হওয়ার পর থেকে শুরু হয় তার সাথে কিছু অস্বাভাবিক এবং আধিভৌতিক ঘটনা। প্রতি রাতে ঠিক ৩ টা বাজলে সে পেতে থাকে পোড়া মাংসের গন্ধও। রাত ৩টায় তার শরীর ভার হয়ে যেতে থাকে। তার রুমের ঘড়িটা ঠিক রাত তিনটায় থেমে যেত।
একরাতে সে তার পায়ের কাছে ভারি কিছু একটা অনুভব করতে পারে। তার কিছুক্ষণ পরেই যা হয় তা যতটা না ভয়ানক তার থেকে বেশি হৃদয়বিদারক। সে অনুভব করে কেউ একজন বা কিছু একটা তার সাথে জোরপুর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাচ্ছে। এবং জনিসটার গায়ে ২০টা বুনো ষাঁড় এর শক্তি। এবং সেই রাতে সে পরাজিত হয় ওই অজানা বস্তুটার কাছে।
সারা শরীরে অমানবিক ব্যাথা আর কিছু আঘাতের ছাপ নিয়ে পরদিন সে ঘুম থেকে ওঠে এবং হাসপাতাল কর্তিপক্ষকে বললে তারা তার কথা বিশ্বাস করে ন। এভাবে কিছুদিন কাটতে না কাটতেই আনেলিসা তার আশেপাশের সকল মানুষের চেহারার বিকৃতি দেখতে থাকে। সে দেখতে থাকে মানুষের চেহারার পরিবর্তে সেখানে ডিমনদের চেহারা দেখা যাচ্ছে। যারা তার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যখন সে চার্চে যায় তখন মনে হয় চার্চের ভিতর সে একাই মানুষ আর আশেপাশে যারা আছে তারা সবাই নরকের নরখাদক পিশাচ।
১৯৭০ সালে, যখন তার বয়সী যুবতীরা আমোদ ফুর্তিতে মেতে তখন সে তার ঘরের এক কোনে একা একা পড়ে থাকতে থাকে। বাইবেল পড়ে সে জেনেছে তার রোগের ডাক্তারি কোনো চিকিৎসা এখনও আবিষ্কৃত হয় নি। সে যেই ব্যাধিতে আক্রান্ত তার নাম শুদ্ধ ইংলিশে “পজেশন” বলে পরিচিত। তার কানের কাছে সবসময় বাজতে থাকে এমন সব অকথ্য কথা যা বলা যয় না। পৈশাচিক কণ্ঠে সে শুনতে পেত সে নাকি চিরজীবনের জন্য নরকের দাসী হতে চলেছে। তার নাকি নরকে পচে মরা ছাড়া কোনো পথ নাই। ডাক্তারের কাছে সে সবই বলতো কিন্তু ডাক্তারদের দ্বারা এই ব্যাধির চিকিৎসা সম্ভব হয়ে উঠছিল না। এক পর্যায় সে ডাক্তারকে বলেঃ- ডীমনগুলো নাকি তাকে অর্ডার দিচ্ছে বিভিন্ন বাজে কাজ করতে।
আজকে আমি যে মুভিটা নিয়ে লিখবো, সেটা হরর মুভি এর জগতে একটি বিশেষ অবস্থান করে রেখেছে। কারণ, মুভিটির মূল চরিত্রের অস্তিত্ব বাস্তব জীবনেও ছিল এবং এটি প্যারানরমাল বিষয়ের হিস্ট্রিতে একটি বহুল আলোচিত ঘটনার উপর চিত্রিত।
মুভিটির নাম হলোঃ- “দ্য এক্সরসিসম অফ এমিলি রোজ” (The Exorcism Of Emily Rose)
![]() |
The Exorcism Of Emily Rose |
আমার মনে হয় মুভির সামারি না দিয়ে আপনাদের সত্য ঘটনাটা বললেই আপনারা বেশি উপকৃত হবেন। কারন, মুভি তো আপনারা ডাউনলোড করেই দেখতে পারবেন। কিন্তু মূল ঘটনা ইন্টারনেটেও কোথাও গুছিয়ে লেখা নাই। তাই আজ আমি প্রথমে ঘটনাটা দিয়েই শুরু করি।
“এমিলি রোজ” একটি ফিকশনাল নাম। যার ঘটনা নিয়ে এই মুভিটা হয়েছে তার আসল নাম হলো, “আনেলিসা মিশেল”। সে ১৯৫২ সালের ২১শে সেপ্টেম্বার, জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করে। বাভেরিয়া শহরের খুবই সাধারণ এবং সুন্দর একটি মেয়ে ছিল সে। সহজ-সরল এবং ধার্মিক স্বভাবের ছিল।
১৬ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৯৬৮ সালে হঠাৎ একদিন সে দেখল সে তার নিজের শরীরের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। সাহায্যের জন্য সে তার পিতা-মাতা আর তিন বোনকে ডেকেছিল ঠিকই কিন্তু তার আওয়াজ কেউ শুনতে পারে নি।
এই ঘটনার পর পরিবার থেকে তাকে “উজবার্গ” ক্লিনিকের একজন সাইকাট্রিস্ট এর কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে দেখে ডঃ বলেন তার ব্রেইনে এবনর্মাল ভাবে ইলেকট্রিকাল একটিভিটি ঘটার ফলে তার ব্রেইন সেল এবং মাসেল এর ইনজুরি হয়েছে। ডাক্তারি ভাষায় যাকে বলা হয় “গ্র্যান্ড মল এপিলেপসি”। ট্রিটমেন্টের জন্য তাকে হসপিটালে এডমিট করা হয়।

একরাতে সে তার পায়ের কাছে ভারি কিছু একটা অনুভব করতে পারে। তার কিছুক্ষণ পরেই যা হয় তা যতটা না ভয়ানক তার থেকে বেশি হৃদয়বিদারক। সে অনুভব করে কেউ একজন বা কিছু একটা তার সাথে জোরপুর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চাচ্ছে। এবং জনিসটার গায়ে ২০টা বুনো ষাঁড় এর শক্তি। এবং সেই রাতে সে পরাজিত হয় ওই অজানা বস্তুটার কাছে।
সারা শরীরে অমানবিক ব্যাথা আর কিছু আঘাতের ছাপ নিয়ে পরদিন সে ঘুম থেকে ওঠে এবং হাসপাতাল কর্তিপক্ষকে বললে তারা তার কথা বিশ্বাস করে ন। এভাবে কিছুদিন কাটতে না কাটতেই আনেলিসা তার আশেপাশের সকল মানুষের চেহারার বিকৃতি দেখতে থাকে। সে দেখতে থাকে মানুষের চেহারার পরিবর্তে সেখানে ডিমনদের চেহারা দেখা যাচ্ছে। যারা তার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যখন সে চার্চে যায় তখন মনে হয় চার্চের ভিতর সে একাই মানুষ আর আশেপাশে যারা আছে তারা সবাই নরকের নরখাদক পিশাচ।
১৯৭০ সালে, যখন তার বয়সী যুবতীরা আমোদ ফুর্তিতে মেতে তখন সে তার ঘরের এক কোনে একা একা পড়ে থাকতে থাকে। বাইবেল পড়ে সে জেনেছে তার রোগের ডাক্তারি কোনো চিকিৎসা এখনও আবিষ্কৃত হয় নি। সে যেই ব্যাধিতে আক্রান্ত তার নাম শুদ্ধ ইংলিশে “পজেশন” বলে পরিচিত। তার কানের কাছে সবসময় বাজতে থাকে এমন সব অকথ্য কথা যা বলা যয় না। পৈশাচিক কণ্ঠে সে শুনতে পেত সে নাকি চিরজীবনের জন্য নরকের দাসী হতে চলেছে। তার নাকি নরকে পচে মরা ছাড়া কোনো পথ নাই। ডাক্তারের কাছে সে সবই বলতো কিন্তু ডাক্তারদের দ্বারা এই ব্যাধির চিকিৎসা সম্ভব হয়ে উঠছিল না। এক পর্যায় সে ডাক্তারকে বলেঃ- ডীমনগুলো নাকি তাকে অর্ডার দিচ্ছে বিভিন্ন বাজে কাজ করতে।
ব্যাপারগুলো আরও বেশি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আগে,১৯৭৩ সালের গৃষ্মকালে আনেলিসার পিতা-মাতা “উজবার্গ”এর ভিন্ন ভিন্ন চার্চের ফাদার আর বিশপদের কাছে “এক্সরসিসম” এর অনুমতি চায়। কিন্তু এক্সরসিসম ৪০০ বছর পুরানো একটি প্রাচীন পদ্ধতি হওয়ার কারনে, তারা কেউই এক্সরসিসম করতে চায় না। তারা ডাক্তারের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেন।
পরবর্তিতে ১৯৭৪ সালে একজন বিশপ ১ মাস আনেলিসাকে বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষন করার পর এক্সরসিম করতে রাজি হন। কিন্তু “খ্রিস্টান বোর্ড অব বিশপ” থেকে এক্সরসিসম না করার আদেশ দিয়ে দেয়। আর তারা বলে আনিলিসাকে আরও ধার্মিক উপায়ে জীবনযাপন করতে।
পরবর্তিতে ১৯৭৪ সালে একজন বিশপ ১ মাস আনেলিসাকে বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষন করার পর এক্সরসিম করতে রাজি হন। কিন্তু “খ্রিস্টান বোর্ড অব বিশপ” থেকে এক্সরসিসম না করার আদেশ দিয়ে দেয়। আর তারা বলে আনিলিসাকে আরও ধার্মিক উপায়ে জীবনযাপন করতে।
কিন্তু ডিমনদের অত্যাচার থামল না। তার আচরণ আরও খারাপ হতে থাকলো। “ক্লিনজেনবার্গ”এ তার নিজের বাড়ীতে সে তার মা-বাবা কে অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকলো, এক পর্যায়ে তার পরিবারের সদস্যদের গায়ে হাত তোলা শুরু করলো সে! সে কোনো খাবার খেত না, কাড়ন জিজ্ঞাসা করলে কাঁদতে কাঁদতে বলত, “ডিমনরা তাকে খেতে নিষেধ করেছে”। সে বাড়ির মেঝেতে ঘুমাতো। মাকড়োশা,মাছি,চিমনীর কয়লা এগুলা খেতে শুরু করলো। এক পর্যায়ে তার নিজের মুত্র খাওয়া শুরু করলো। রাতেরও একটা বিশেষ সময় সে চিৎকার করত এবং জিশুর চিত্র হাত দিয়ে খেমচিয়ে নষ্ট করত, ক্রুসিফিক্স ভেঙে ফেলত। কিছুদিন পর সে নিজের কাপড় নিজে ছেড়া শুরু করলো এবং যেখানে সেখানে মল-মুত্র ত্যাগ করা শুরু করল।
![]() |
Anna Elisabeth Michel 1952-1976 |
১৯৭৫ সালে খ্রিস্টান বোর্ড অনুমতি দিলে, উলজবার্গের বিশপ “জোসেফ স্টাঙ্গাল”, “ফাদার আর্নল্ড রেনজ” এবং “পাস্তর আর্নেস্ট আল্ট” ইতিহাসে সেরা এক্সরসিসম এর জন্ম দিলেন। প্রথম সেশনের তারা জানতে পারলেন আনলিসার উপর একটি ডিমন নয় বরং ছয়টি ডিমন একসাথে ভর করেছে। এরকম কেস তারা আগে কখনও দেখে নি। ডিমন ছয়টির নামঃ-
১। কেইন
২। নিরো
৩।জুডাস
৪।লিজন
৫।বেলিয়াল
৬।লুসিফার
২। নিরো
৩।জুডাস
৪।লিজন
৫।বেলিয়াল
৬।লুসিফার
প্রথম সেশনের পরে কোনো কাজই হল না। এভাবে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আনেলিসার উপরে চালানো হয়েছিল এক্সরসিসমের বহু সেশন। প্রায় সব সেশনেই তার মা-বাবা উপস্থিত ছিল। সেশনের কিছু কিছু সময় আনিলিসাকে ধরে রাখতে তিনজন শক্ত জোয়ান লাগত আবার কখনওবা তাকে বাধতে হত শিকল দিয়ে। একটা পর্যায়ে গিয়ে আনেলিসা সকল প্রকার খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং তার পায়ের অস্থি-মজ্জায় ক্ষয় দেখা দেয় আর সে গভীর প্যারালাইসিসে চলে যায়। অনেক কষ্ট ও অমানবিক যন্ত্রনায় ভরা আনিলিসা মিশেল নামের এই সাধাসিধা মেয়েটির জীবনের ইতি ঘটে ১৯৭৬ সালে।
এক্সরসিসমের কিছু সেশনের রেকর্ডিং “ইউটিউবে” পেতে পারেন। আরও অনেক কিছুই জানতে পারবেন মুভিটি দেখলে।
এক্সরসিসমের কিছু সেশনের রেকর্ডিং “ইউটিউবে” পেতে পারেন। আরও অনেক কিছুই জানতে পারবেন মুভিটি দেখলে।
আপনারা যদি চান তবে এই ছয়টি ডিমন সম্পর্কে আমি লিখতে পারি।
কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে করুন।